উপর্যুপরি বন্যায় বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে লাখ লাখ মানুষ টানা ৯ দিন পানিবন্দি থাকার পর পানি কমতে শুরু করে । এখন আর কমছে না, পানি যেন দাড়িয়ে পড়েছে। লামাকাজী, খাজাঞ্চি, অলংকারি, রামপাশা, দৌলতপুর, দশঘর ও দেওকলস ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দি আছেন। .
বন্যার পানি ধীর গতিতে কমছে। কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলো বন্যাক্রান্ত হওয়ায় ভাটিতে গড়াচ্ছে না আগের বন্যার পানি। ইতিহাসখ্যাত এবারের বন্যায় রেখে যাচ্ছে অসংখ্য ক্ষত। পানির স্রোতে ধসে গেছে বহু বাড়িঘর, রেললাইন, সড়ক আর সেতুর এপ্রোস। পুরো উপজেলায় মারা গেছেন ৬ জন। গবাদিপশু, পুকুরের মাছ আর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে । মায়ের কোল থেকে পানিতে ভেসে গেছে শিশু কন্যা আদরের দোলালি তায়্যিবা। এখনওল বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যাননি অনেক দুর্গত পরিবার। প্রথমদিকে বিদ্যুৎ সহ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এ দুর্ভোগের মাত্রা বেশিই হয়েছে। অভুতপূর্ব ত্রাণের বিতরণ হওয়া স্বত্বেও বিতরণে সমন্বয়হীনতা পরিলক্ষিত হয়েছে। কেউ বারবার পেয়েছে আর কেউ চেয়ে চেয়ে দেখেছে। যাতায়াত সুবিধা ও সড়কের পাশাপাশি গ্রামের পরিবার গুলোর কপালে খাবার জুটলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দিন কাটছে অনাহারে খেয়ে না খেয়ে।.
এবারের ভয়াল বন্যায় উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় সব সড়কই ভেঙে খাল হয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। পানি কমার সাথে সাথে মানুষের জীবনমানের ব্যস্ততা বাড়লেও চরম ভোগান্তিতে রয়েছে এ এলাকার মানুষ। অনেক সড়কে এখন পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে লামাকাজী ও খাজাঞ্চি ইউনিয়নের রাস্তা বিশ্বনাথ ভায়া খাজাঞ্চি -কামালবাজার রাস্তা ও রেললাইন প্রায় শেষ। মেরামত না করে ব্যবহার মোটেই সম্ভব নয়। পানির স্রোতে নিচের মাটি সরে গিয়ে রেললাইন ঝুলে রয়েছে। রেললাইনের পার্শ্ববর্তী পাকিছিরি, কাবিলপুর, প্রয়াগমহল, কিষ্ণপুর, কান্দিগাঁও সহ অত্র এলাকার মানুষের যোগাযোগ স্তিমিত হয়ে আছে। খাজাঞ্চি ইউনিয়ন থেকে শুরু করে লামাকাজী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থানে রেললাইন ঝুলে আছে। শিল্পনগরী খ্যাত ছাতকের সঙ্গে সিলেটের রেল যোগাযোগ কোনক্রমেই সম্ভব নয়। গেল করোনা পর থেকে এমনিতেই এ লাইনে চলেনা ট্রেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেট- ছাতক রেলপথ স্বাভাবিক হওয়া নিয়ে অনিশ্চিয়তা রয়েছে। .
অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট সিলেটে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট-ছাতক রেলপথ। .
সিলেট হতে ছাতক পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটি ১৯৫৪ সালে নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ করার পর থেকে এই রেলপথটিতে তার আপন গতিতে ট্রেন চলাচল শুরু করে। সিলেট হতে ছাতক পৌঁছাতে ট্রেন পথিমধ্যে খাজাঞ্চি -সৎপুর - আফজলাবাদ এই তিনটি ষ্টেশনে যাত্রাবিরতি করতো। এই সব ষ্টেশন থেকে এলাকার প্রায় কয়েক হাজার মানুষ সিলেটে আসা-যাওয়া করে থাকতেন। সিলেটে পৌঁছাতে এক সময় এই ট্রেনই ছিল যাতায়াতের একমাত্র বাহন। কিন্তু দূর্ভাগ্য: করোনা পাদুর্ভাবের পর থেকে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে ট্রেন চলছেইনা।.
উপর্যুপরি বন্যায় বিশ্বনাথ উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নুসরাত জাহান এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্যায় সৃষ্ট সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। এব্যাপারে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গণের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।. .
ডে-নাইট-নিউজ / মুহাম্মদ সায়েস্তা মিয়া, স্টাফ রিপোর্টারঃ
আপনার মতামত লিখুন: